ওয়েব ডেস্কঃ লকডাউনে খেলাধুলা, হইহুল্লোড় বন্ধ করে বাড়িতে বাবা-মায়ের চোখের সামনে বসে থাকতে হচ্ছে দিনরাত, বন্ধ ঘুরতে যাওয়া। আইসক্রিম। তার উপর অনলাইন ক্লাস ও টাস্কের চাপ। সেখানেও একটু এ দিক থেকে সে দিক হলে বাবা-মায়ের চোখরাঙানি চলছেই।
সময়ে স্নান করতে ও খেতে হবে, ঘুমোতে হবে সময়ে, বেশি ক্ষণ গল্প করা যাবে না, এমনকি ধরে বসে খেলতেও হবে নিয়ম মেনে। তার উপর আগে যতটুকু ভালমন্দ খাওয়া হত— সে রেস্তরাঁয় গিয়ে হোক বা বন্ধুদের টিফিনের ভাগ থেকে— এখন সে সবও একদম বন্ধ। মিলছে না চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্ক, পিৎজা, মোমো। অখাদ্য খাবার অপছন্দ হলেও খেতে হবে বাবা-মায়ের আদেশে। ফলে কথায় কথায় বিদ্রোহ করছে সন্তান।
তবে আদরের সন্তানকে একটু বুঝলে এই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হতেই পারে। প্রয়োজনে নিজের ব্যবহারে পরিবর্তন আনুন। যা করবেন, তার বেশ কিছুটা সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে করুন। তার মতামত অগ্রাহ্য করে নিজের মত চাপালে হবে না সব সময়। গুরুত্ব দিন প্রিয় সন্তানকেও।
দু’জনে কথা বলে মোটামুটি একটা রুটিন ঠিক করে নিন। কত ক্ষণ সে পড়বে, কত ক্ষণ টিভি দেখবে, কত ক্ষণ গেম খেলবে আর কত ক্ষণই বা আপনার কাজে সাহায্য করবে। খেয়াল রাখুন সে রুটিন মানছে কিনা। অনিয়ম করলে দিনের শেষে মনে করিয়ে দিন। এতে অশান্তি কমবে, সে নিজের দায়িত্বও নিতে শিখে যাবে। শিখবে নিয়মানুবর্তিতা। সব সময় বকাবকি করলে যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একঘেয়ে রুটিনের ব্যাপারটা যদি সন্তানের কাছে নতুন কিছু হয় তা হলে প্রথমে উৎসাহ ভরে রাজি হলেও পরে আর তা পালন করবে না সন্তান। ধৈর্য ধরুন। বকাঝকা বা মারধোর না করে নিয়মিত মনে করিয়ে যান। একটা সময় ধাতে চলে আসবে তার কি করনীয়।
সে যখন পড়তে বসবে, আপনিও তার পাশে থেকে দৃষ্টি রাখুন। সে সময়ে অন্য কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখবেন না। তার প্রতি আপনিও খেয়াল রাখছেন বুঝতে দিন তাকেও।
যে দিন পুরো নিয়ম মানবে বা অনিয়ম কম করবে, সে দিন ওর পছন্দের কোনও খাবার বানিয়ে খাওয়াতেই পারেন। বা পছন্দের কোনও গেম বা শো আধ ঘণ্টা বেশি খেলার বা দেখার সুযোগ দিতে পারেন। এটা যে তার নিয়ম মানার পুরষ্কার তা ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ সে যেন বোঝে নিয়ম মানলে পুরষ্কার ও না মানলে তিরষ্কার পাওয়াটাই পরিবারের সাধারণ নিয়ম।
তার কোনও বিশেষ দাবিদাওয়া থাকলে আগেই তা নস্যাৎ করে না দিয়ে মন দিয়ে শুনুন এবং বুঝতে চান সে কী বলতে চাইছে। ভেবে দেখুন, তাতে তার কোনও ক্ষতি হবে কি না। না হলে ১০টার মধ্যে ৫-৭টা মেনে নিতেই পারেন। তা হলে যেগুলি মানলেন না তা নিয়ে তার অভিযোগ থাকবে না।
• অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। তারই কোনও বন্ধু বা পড়শি কত ভাল করে পড়ছে বা ঘরের কাজে সাহায্য করছে আর সে কিছু করছে না, এ সব বলে লাভ তো কিছু হবেই না, বরং অশান্তি বাড়বেই।
আপনি হয়তো ভাবেন, আপনি টেনশনে আছেন আর সন্তান আছে দিব্যি দুধেভাতে। তা কিন্তু নয়। সেও নানা উদ্বেগের মধ্যেই আছে। কবে স্কুল খুলবে, কবে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে তার দেখা হবে। কবে বন্দি দশা ঘুচবে ইত্যাদি নিয়ে তারও মনে খুব দুঃশ্চিন্তা ঘুরছে। কাজেই সারা ক্ষণ শাসন করে তার ঘরে থাকাটা অসহনীয় করে না তোলাই ভাল। বাড়িতে সে যেন নিয়মও মানে আবার আনন্দেও থাকে সেই ভারসাম্য দু’জনকেই বজায় রেখে চলতে হবে।